প্রকাশিত:
২০ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:৩৬
দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদ্যোগে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, প্রদর্শনী এবং ভিন্নধর্মী আয়োজনে পালিত হয় দিবসটি
১৯ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত কেউই বুঝতে পারেনি যে মশা রোগের জীবাণু বহনকারী বা ভেক্টর। প্রথম সাফল্য আসে ১৮৭৭ সালে যখন ব্রিটিশ ডাক্তার প্যাট্রিক ম্যানসন আবিষ্কার করেন একটি কিউলেক্স প্রজাতির মশা মানুষের ফাইলেরিয়াল রাউন্ডওয়ার্ম বহন করতে পারে।
পরবর্তী সময়ে, ১৮৯৪ সালে ম্যানসন ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের সম্ভাব্য ভেক্টর হিসেবে ‘মশা বিষয়ক অধ্যয়ন’ করতে ভারতীয় মেডিকেল সার্ভিসের মেডিকেল অফিসার রোনাল্ড রসকে রাজি করান। বছরের পর বছর নিরলস গবেষণা করেন রোনাল্ড রস। তাঁর সহ-গবেষক ছিলেন চিকিৎসক কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত ১৮৯৭ সালে প্রমাণিত হয় অ্যানোফিলিস মশার অন্ত্রের টিস্যুতে ম্যালেরিয়া পরজীবী বহন করতে পারে। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯০২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘নোবেল’ পুরস্কার পান রোনাল্ড। আর ১৯০৩ সালে ব্রিটেনের ‘সম্রাট এডওয়ার্ড স্বর্ণপদকে’ ভূষিত হন কিশোরীমোহন।
১৯৩০ সাল থেকে দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদ্যোগে রোনাল্ডের আবিষ্কারের দিন অর্থাৎ ২০ আগস্ট—মশা দিবস হিসেবে বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মশা ও মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করা। এ বছর বিশ্ব মশা দিবসের প্রতিপাদ্য—ন্যায্যতার বিশ্ব গড়তে, লড়তে হবে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে (Accelerating the fight against malaria for a more equitable world)।
দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদ্যোগে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, প্রদর্শনী এবং ভিন্নধর্মী আয়োজনে পালিত হয় দিবসটি। এ ছাড়া ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকার মানুষদের ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহও প্রদান করা হয়ে থাকে। দিবসটি কেন্দ্র করে প্রথম আলো ডটকম এবং কাজী এন্টারপ্রাইজের লিমিটেডের ঈগল মশার কয়েল ও ঈগল সুপার অ্যারোসলের যৌথ উদ্যোগে চলছে ‘সচেতনতায় সুরক্ষা’ শীর্ষক বিশেষ প্রচারাভিযান। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে এ প্রচারাভিযানের আওতায় থাকছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, তথ্যভিত্তিক ভিডিও, টক শো ইত্যাদি।
সারা বিশ্বে মশার প্রজাতি রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। যদিও এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রজাতির মশা মানুষকে কামড়ায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা।
জানা যাক, কিছু মশার প্রজাতি ও তাদের ছড়ানো রোগ সম্পর্কে—
যে মশার কারণে মানুষ নাজেহাল হয়, সেটি ‘কিউলেক্স’। এটি আপাতদৃষ্টিতে শহরাঞ্চলে কোনো রোগ সৃষ্টি না করলেও, দেশের বিভিন্ন স্থানে গোদ রোগ ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস ছড়াচ্ছে। অ্যানোফিলিস প্রজাতির স্ত্রী-মশা, যা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। আর ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার দুটি প্রজাতি। যার একটি হলো এডিস ইজিপ্টি, আরেকটি হলো অ্যালবোপিকটাস। বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস।
১৯৬৪ সালে প্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস ‘ঢাকা ফিভার’ নামে শনাক্ত হয়। পরে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু হিসেবে শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে, তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ ২০২৩-এ অন্যান্য বছরের তুলনায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০২৪-এ এসে যা কিছুটা কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৮১৬ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশলগত অগ্রাধিকার ঠিক করা, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানো, হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনায় সৃজনশীল উদ্যোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা চালু, মশারি বিতরণ, মশার ওপর নিয়মিত নজরদারি এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত ও জোরালো তদারকির মাধ্যমে মশাবাহিত রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এমএএন
মন্তব্য করুন: