ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ১১ মে ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ হন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। গত ০৮ (আট) দিন যাবৎ নিখোঁজ থাকার পর কলকাতার নিউটাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘সঞ্জিভা গার্ডেন’ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ।
কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজিম তার যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাস বুধবার সকালে পুলিশের কাছ থেকে আনারের লাশ উদ্ধারের খবর পান বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য নিখোঁজ হওয়ার পর তার খোঁজে নেমে তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তারা জানতে পারে কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো জায়গায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ২০ মে’র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছিল বিবিসি বাংলা।
ওই প্রতিবেদনে আনোয়ারুল আজিমের বন্ধু বলতে যার কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন গোপাল বিশ্বাস। আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজ হওয়ার পর বরাহনগর থানায় যে ‘জেনারেল মিসিং ডায়েরি’ করা হয়েছিল সেটিও করেছিলেন এই গোপাল বিশ্বাসই।
বিবিসি বাংলাকে গোপাল বিশ্বাস বলেছিলেন, পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটিকে খুঁজে বার করেছে আর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। এদের দুজনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ মে।
গোপাল বিশ্বাস বলেছিলেন আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার পারিবারিক সম্পর্ক।
বিবিসি বাংলাকে তিনি আরও বলেন, এবারে তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার জানাশোনা কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন। আমরা একসঙ্গে সকালের জলখাবার খেয়েছিলাম। তারপরে এটাও তাকে বলেছিলাম যে আমার গাড়ি সেদিন নেই, উনি যেন গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেন। এরপরে আমি বাড়ির একতলায় অফিসে চলে আসি।
‘এরপর আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে বের হওয়ার সময়ে আমাকে বলে যান যে তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। তার খোঁজ না পাওয়ার পরে আমি যখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখি, তখন জানতে পারি যে উনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুপুর একটা ৪১ মিনিটে।’
গোপাল বিশ্বাস নিখোঁজ ডায়েরিতে লিখেছিলেন, তার বাড়ির অদূরে বিধান পার্ক এলাকা থেকে ভাড়ার গাড়িটিতে ওঠেন আনোয়ারুল আজিম। তাকে গাড়িতে উঠতে দেখেছেন, এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথাও পুলিশকে গোপাল বিশ্বান জানান বলে লিখেছে বিবিসি।
সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়িতে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেখানে ফেরেননি আনোয়ারুল আজিম। হোয়াটস্অ্যাপে মেসেজ পাঠান তিনি যে ‘বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’
১৫ মে সকালে গোপাল বিশ্বাস আবারও একটি হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ পান। সেখানে বলা হয় যে তিনি (আনোয়ারুল আজিম) দিল্লি পৌঁছেছেন এবং তার সঙ্গে ‘ভিআইপিরা’ আছেন, তাই তাকে যেন ফোন না করা হয়।
এর দু'দিন পরে, ১৭ মে গোপাল বিশ্বাসকে আজিমের মেয়ে ফোন করে জানান যে তার বাবার সঙ্গে কিছুতেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না।
গোপাল বিশ্বাস বলেন, সে খবর জানতে পেরে কলকাতায় ওর যত ঘনিষ্ঠ মানুষ আছেন বলে আমি জানি, সবাইকে বিষয়টা জানাই। তারাও খোঁজ খবর করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনোভাবেই আজিমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরদিন ১৮ মে বরাহনগর থানায় যান তিনি।
এনএম
মন্তব্য করুন: