নিম্নগামী জন্মহার ও বার্ধক্যে জর্জরিত জাপান গত দেড় দশক ধরে জনসংখ্যা নিম্নমুখী। যার ফলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশ দ্রুত জনসংখ্যা এবং দক্ষ কর্মীর ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাতে করে দক্ষ কর্মীর সংকট কিছুটা কমানো যায়, এখন জাপান নজর দিচ্ছে প্রযুক্তি শিল্প ও অভিবাসনের দিকে ৷
জাপানে নার্সিং ও বয়স্ক মানুষের দেখাশোনার খাতে বড় সংকট দেখা দিচ্ছে ৷ এমনকি দক্ষ কর্মী সংকট রয়েছে নির্মাণ খাত ও ডেলিভারি ব্যবসাতেও ৷ বড় ধরনের সংকট রয়েছে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদেরও ৷
জাপান সরকার গত বছর শিক্ষা খাতে দক্ষ কর্মী টানতে পাঁচশ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (৩৭ কোটি বাংলাদেশি টাকা) বিনিয়োগ করে ৷
আগের তুলনায় কম নারীরা কাজে ঢুকছেন, ফলে সেই দিকেও সংকট দেখা যাচ্ছে৷ জাপান সরকার একারণে নানা ধরনের সমাধানে গেলেও সম্প্রতি তারা নজর ঘুরিয়েছে বিদেশি কর্মীদের আকর্ষণ করতেও৷ একইসঙ্গে অভিবাসন নীতিকেও সহজ করার চেষ্টা করছে তারা৷
আবার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছে জাপান। এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা ঘোষণা করেছে ফুমিও কিশিদার সরকার। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশটিকে বিদেশী কর্মীর সংখ্যা চার গুণ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে টোকিওভিত্তিক একটি পাবলিক থিংক ট্যাংক। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাটি সংকুচিত জনসংখ্যার জন্য অভিবাসী শ্রমের ওপর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাকে তুলে ধরে।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছে জাপান। ফলে ছাত্র ও শ্রমিকদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশী প্রতিভা আকর্ষণ নিয়ে দেশটির এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্ত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) গবেষণা শাখা জানিয়েছে, সরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রাক্কলনে গড় বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৪ শতাংশ ধরে রাখতে চায়। তবে এর জন্য সরকারকে ২০৪০ সালের মধ্যে বিদেশী কর্মী সংখ্যা ৬৭ লাখ ৪০ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
বিদেশী কর্মীর এ সংখ্যা বর্তমানের ১৭ লাখ ২০ হাজারের চেয়ে প্রায় ৩০০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে বিদেশী কর্মীরা জাপানের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৯ সালে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হয় যার মাধ্যমে যে খাতে সবচেয়ে চরম কর্মী সংকট, তাতে পাঁচ বছরের জন্য কাজ করতে আসতে পারবেন বিদেশিরা৷ এছাড়া, যারা ‘উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন’ কর্মী, তাদের কাছে সুযোগ থাকবে স্থায়ীভাবে জাপানে থেকে যাবার৷
টোকিও আশা করেছিল যে এই ব্যবস্থা চালু হবার পর অভিবাসী কর্মীদের ভিড় নামবে৷ অন্তত সাড়ে তিন লাখ কর্মীর আগমন আশা করেছিল তারা৷ কিন্তু প্রথম বছরের প্রথম মাসে, আসে তিন হাজার কর্মী, যার পর করোনা অতিমারিকালীন কড়াকড়ি অভিবাসীদের আগমন আরো কঠিন করে দেয়৷
সম্প্রতি আবার অভিবাসীদের টানতে সচেষ্ট হয়েছে জাপান৷ সোমবার তারা ঘোষণা করে যে, দক্ষ কর্মী আসতে পারবে এমন খাতের তালিকায় আরো চারটি কাজকে যুক্ত করা হয়েছে৷ সাথে, বাস, ট্রেন বা ট্রাকচালক হিসাবে আসার ভিসার সংখ্যাও বাড়াচ্ছে তারা৷
উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকায়, বিশেষ করে অটোমেশন, রোবোটিক্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়৷ জাপানের জনসংখ্যা প্রতি বছর কমছে৷ জার্মানির শহর প্রাংকফুর্টের জনসংখ্যার সমান জনবল হারাচ্ছে জাপান প্রতি বছর ৷
এখন কর্মী সংকট মেটাতে রেস্টুরেন্টসহ নানা জায়গায় কাজে লাগানো হচ্ছে রোবটদের৷
প্রযুক্তি যেভাবে মানুষের কাজের জায়গা নিচ্ছে, তাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না জাপানের জনতা ও শ্রম বিভাগও ৷
এনএম
মন্তব্য করুন: