ঢাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেছে, বেঁচেছে সময়। মেট্রোরেলে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
বিগত আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর একটি মেট্রোরেল। অনেক প্রতীক্ষার পর গত বছর পূর্ণ উদ্যমে চালু হয় মেট্রোরেল লাইন-৬। যদিও এ প্রকল্পের কমলাপুর অংশের কাজ এখনো চলমান। জুলাই শেষে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশ। মূল প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা হলেও দুবার সংশোধনীর পর মাত্র দেড় কিলোমিটার বাড়ানোর পর এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
জাপানি ঋণের এই প্রকল্প পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর একই রকমের প্রকল্পের তুলনায় বেশি খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধু টিকিটের আয়ে প্রকল্পটির বিনিয়োগ উঠে আসতে সময় লাগবে ৪৫ বছর।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পুরোদমে চালু হলে মেট্রোরেলে দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী চলাচল করবেন। তখন মাসে ৭২০-৭৩০ কোটি টাকা আয় হবে। সেই হিসাবে দাম না বাড়ালে শুধু টিকিট বিক্রির আয় দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের খরচ উঠে আসতে কমপক্ষে ৪৫ বছর লাগবে। মেট্রোরেল যখন পুরোদমে চলবে, তখন প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকার মতো পরিচালন ব্যয় হবে। এই খরচের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসবে টিকিট বিক্রি থেকে। বাকিটা পাওয়া যাবে স্টেশন প্লাজার দোকান ভাড়া, বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য খাত থেকে। তাছাড়া গত জুলাইয়ে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। ফলে ওই দুই স্টেশনের খরচ টিকিট বিক্রির লাভ আসবে না এক বছরেও।
মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য পাঁচটি আলাদা চুক্তির মাধ্যমে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের মে মাসে মাশুল, সুদ, আসলসহ প্রথম কিস্তির ৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির সুদ-আসল বাবদ ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর দুটি কিস্তিতে এভাবেই আগামী ৩০ বছর ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ঋণচুক্তির গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেওয়া ও পরিশোধ শুরুর মাঝখানের বিরতি) শেষ হবে আরও তিন বছর পরে। প্রথম ঋণচুক্তির কিস্তির মতো তখনো বছরে দুটি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। এভাবে ২০৩১-৩২ অর্থবছর থেকে পঞ্চম ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। ওই বছর পাঁচটি ঋণচুক্তির জন্য একসঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিস্তির পরিমাণও বাড়বে বলে জানা গেছে। ২০৬১-৬২ অর্থবছরে মেট্রোরেলের সব ঋণ পরিশোধ হবে।
এমএএন
মন্তব্য করুন: