মানসিক চাপে বা দুশ্চিন্তার কোরণে উদ্বেগ বাড়লেই অনেকে মিষ্টি কিংবা ভাজাভুজি খেলে হয়তো সাময়িক ভাবে স্বস্তি পেতে পারেন, তবে উদ্বেগের হাত থেকে সম্পূর্ণরূপে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। উল্টে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মিষ্টি জাতীয় খাবারের কারণে উদ্বেগের মাত্রা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যেতে পারে।
বাস্তবে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন, কর্মব্যস্ততা, এসব মিলিয়ে মানসিক উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা বাড়ছে। জীবন দিন দিন যত গতিময় হচ্ছে, ততই মনের মধ্যে গ্রাস করছে উদ্বেগের মেঘ। এই মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কাজের গতি কমিয়ে দেয়, অস্থিরতার জন্ম দেয়।
অনেকেরই কম চাপেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার সমস্যা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকটি খাবার। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, উদ্বেগের সঙ্গে খাবারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপ বাড়লে কিংবা উদ্বেগ বাড়লে অনেকেরই পেষ্টি জাতীয় খাবার, চিপ্স, বার্গার, ভাজাভুজি, কোমল পানীয় বা মিষ্টি খেতে মন চায়। এসব খাবার খেলে হয়তো সাময়িকভাবে স্বস্তি পেতে পারে, তবে উদ্বেগের হাত থেকে সম্পূর্ণরূপে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। উল্টে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এসব খাবারের কারণে উদ্বেগের মাত্রা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। যাদের ডায়েটে উচ্চ মাত্রায় ফ্যাট ও শর্করা থাকে, তাদের জীবনে উদ্বেগ কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন তারা। বায়োলজিক্যাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণায় দেখা যায়, ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা খুব বেশি থাকলে, তা প্রাণীদেহের অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্যকে ব্যাহত করে। এই সমস্যা ডিসবায়োসিস নামে পরিচিত। শরীরে এ পরিবর্তনের জন্য আচরণেও পরিবর্তন আসে, প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের উপরেও, এর ফলেই উদ্বেগও বেড়ে যায়। এই গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা বোঝাতে চেয়েছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কেবল শরীরের উপর প্রভাব ফেলে তাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে।
তাই উদ্বেগ বাড়়লে যারা ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম কিংবা মিষ্টির খোঁজ করেন, ফুড ডেলিভারি অ্যাপে বার্গার, পিৎজ়া, পাস্তা, রোল, চাউমিন, মোমো অর্ডার করেন, তাদের এখনই সাবধান হওয়া জরুরি। তা হলে মন খারাপ হলে কিংবা উদ্বেগ বাড়লে কী করণীয়? এমন কিছু খাবার আছে যে গুলি সকলের মন ভাল করে দিতে পারে, আবার উদ্বেগকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিম্নে দেখে নিন, কী কী রয়েছে সেই তালিকায়।
১) ডার্ক চকোলেট: ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ‘ফ্যাভোনল’ জাতীয় উপাদান মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডার্ক চকোলেটে থাকে ‘এপিক্যাটেকিন’ ও ‘ক্যাটেকিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, এই উপাদানগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মস্তিষ্কের কোষে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ডায়াবিটিস ও অনুরূপ সমস্যা থাকলে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার আগে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।
২) ব্লুবেরি: অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি-তে ভরপুর ব্লুবেরি, স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। উদ্বেগমুক্ত হয়ে দিন শুরু করার জন্য সকালে জলখাবারের সঙ্গে রাখতেই পারেন ব্লুবেরি। তবে এই ফলের দাম যে হেতু বেশি, তাই সকলের পক্ষে তা কেনা সম্ভব না-ও হতে পারে। এর বদলে জাম খেলেও একই ফল পাবেন।
৩) কমলালেবু: কমলালেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি। এ ছাড়াও এই ফলে রয়েছে এমন কিছু যৌগ, যা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই জলখাবার খাওয়ার অন্তত পক্ষে আধ ঘণ্টা পর একটি করে কমলালেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৪) কলা: উদ্বেগ বেড়ে গেলে তা হৃদ্স্পন্দনকেও প্রভাবিত করে। হৃদ্স্পন্দনকে স্বাভাবিক ছন্দে রাখতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম। আর এই যৌগটির প্রাকৃতিক উৎস হল কলা। তবে শুধু উদ্বেগ নয়, হঠাৎ বিগড়ে যাওয়া মেজাজ ভাল করতেও কলার জুড়ি মেলা ভার।
৫) মিষ্টি আলু: নিয়মিত মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি পদ খেলে ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি পূরণ হয়। মন ভাল রাখতে পারে এমন দু’টি হরমোন, সেরোটোনিন এবং ডোপামাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এই ভিটামিনটি। মন খারাপ হলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বদলে মিষ্টি আলুতে মশলা মাখিয়ে ওভেনে ‘বেক’ করে খেতে পারেন।
(প্রতি মুহূর্তে, আলো-আধারের, সময়ের খবর সময়ে পেতে, ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter, Facebook, Youtube, Instagram, Telegram, Linkedin পেজ)
এনএম
মন্তব্য করুন: