কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কারী ফরহাদ কাউসারকে ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় মতানৈক্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধরকারীদের খুঁজতে লাঠি নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সামনে ফরহাদকে মারধর এবং হাত থেকে মোবাইল নিয়ে চেক করার ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার ফরহাদ কাউসার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে মারধরকারী হিসেবে যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক রবিন দাশ, উপ-নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম রিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী আক্তারুজ্জামান পাভেল, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান রাফি, ছাত্রলীগ কর্মী জুনায়েদ লামিম, অর্ণব সিংহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ এনতাজ রাব্বি। এদের অনেকেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহর গ্রুপের কর্মী। এছাড়া মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আগামী কমিটির পদপ্রত্যাশী মেজবাহউল হল শান্ত উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরহাদ কাউসারসহ আরও কয়েকজনকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করিয়ে মোবাইল চেক করে এবং মারধর করে। ফরহাদ কাউসার মারধরের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলে আসলে শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরাও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হল থেকে বেরিয়ে মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেটে যায় মারার উদ্দেশ্যে। মারধরকারীদের না পেয়ে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দত্ত হলের দিকে এগুতে থাকে। তখন শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা উত্তেজিত নেতাকর্মীদের থামাতে চেষ্টা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বঙ্গবন্ধু হল প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন।
হামলার শিকার ফরহাদ কাউসার বলেন, আমি রাতের বাসে শহর থেকে টিউশন করে এসে ক্যাম্পাস গেইট নামি। এরপর আমাকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যান। তারা আমার ফোন কেঁড়ে নিয়ে লক খুলতে বলেন এবং জানতে চান আমি কোটা বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত আছি কিনা। তারা আমার ফোন চেক করতে থাকা অবস্থায় রবিন দাশ প্রথমে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। এরপর পাভেল, রাফি, শান্ত, রিয়াজ, রাব্বি আমাকে মারধর করেন।
ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা এনায়েত উল্লাহ মারধরের বিষয়ে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, কালকে রাজাকার স্লোগানের পর ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করে। আজকেও ওদের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। একপর্যায়ে ওদের একজনের সাথে মারামারি হয়। আমরা তিন হলের সবাই বিষয়টি নিয়ে অবগত রয়েছি। সকলে বসে একটা সমাধানে আসব।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম জানান, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেব, যাতে কেউ বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুবি শাখার সমন্বয়কদের একজন মো. সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই আজকের সকল কর্মসূচি পালন করেছিলাম। কিন্তু এই হামলায় আমরা মর্মাহত। পাশাপাশি তার ফোন চেক করা একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্গন করা হয়েছে। আমরা এর যথাযথ বিচার চাইঅ্যা
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিব। তারা যদি যথাযথ বিচার না করেন তাহলে আমরা আদালত পর্যন্ত যাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান মিলকী বলেন, আমি খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তারপর প্রক্টরিয়াল বডির সাথে মিলে ছাত্রদের থামানোর চেষ্টা করি। আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তবে এখন পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি।
এমএএন
মন্তব্য করুন: